কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম সম্পর্কে। বর্তমানে অনেকেই ইউটিউব এর সাথে কানেক্ট হচ্ছেন। এবং ইউটিউব চ্যানেল এর মাধ্যমে অনেকে উপার্জন করছেন। কিন্তু আপনি কি সঠিকভাবে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম জানেন? জেনে না থাকলে আজকে আপনি এই পোস্টে দেখতে পাবেন কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হয়। চলুন শুরু করা যাক …
ইউটিউব চ্যানেল কি?
গুগোল এর সবচেয়ে জনপ্রিয় কোম্পানি হচ্ছে ইউটিউব। ইউটিউব একটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। এই ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে বা ইউটিউবে পাবলিশার হিসেবে যুক্ত হওয়ার জন্য যে একাউন্ট প্রয়োজন হয় সেটাকেই ইউটিউব চ্যানেল বলে। আর এই ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে নিজের মতো করে ভিডিও আপলোড করার জন্য ব্যবহার করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ইউটিউব চ্যানেল। আর ইউটিউব চ্যানেল এর মাধ্যমে কন্টেন্ট পাবলিস করার একটি আইডেন্টিটি ক্রিয়েট করতে পারবেন। মোটকথা আপনি যদি ইউটিউবে শুরু করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে একটি চ্যানেল খুলতে হবে। তাই চলুন বিস্তারিত দেখে নেই ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম।
ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কি কি লাগে?
ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কি কি লাগে – এই প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত সহজ। আপনার ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে খুব সহজেই কয়েক ধাপেই খুলতে পারবেন ইউটিউব চ্যানেল। ইউটিউব চ্যানেল খুলতে একটি জিমেইল বা গুগল একাউন্ট লাগে।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর চ্যানেল ভেরিফাই করে আরো ফিচার পেতে গেলে ফোন নাম্বার ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে বলা যায় ইউটিউব খুলতে লাগেঃ
- ইন্টারনেট সংযোগ
- জিমেইল অর্থাৎ গুগল একাউন্ট
- মোবাইল নাম্বার
মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম –
আপনার ফোনে যদি ইউটিউব অ্যাপ ও জিমেইল একাউন্ট থাকে আর ওই জিমেইল একাউন্টে ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেল খোলা না থাকে, সেক্ষেত্রে মোবাইল থেকে ইউটিউব চ্যানেল খোলা অত্যন্ত সহজ। মোবাইল থেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলতেঃ
- প্রথমে ইউটিউব অ্যাপ ডাউনলোড করুন
- ইউটিউব অ্যাপে প্রবেশ করুন
- টপ মেন্যু এর টপ রাইট কর্নার থেকে আপনার প্রোফাইল পিকচার ক্লিক করুন
- এরপর My Channel সিলেক্ট করুন
- আপনার চ্যানেল এর নাম দিয়ে Create Channel চাপুন
- ব্যাস! আপনার ইউটিউব চ্যানেল তৈরী হয়ে যাবে
আবার আপনার মোবাইলে যদি ইতিমধ্যে ইউটিউব চ্যানেল খোলা থাকে আর আপনি মোবাইল থেকেই নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে চান, সেটাও করতে পারবেন। মোবাইলে ইউটিউব চ্যানেল খুলতেঃ
- Chrome ব্রাউজার ওপেন করুন
- এরপর youtube.com/account এ প্রবেশ করুন
- থ্রি-ডট মেন্যু থেকে Desktop Mode চালু করুন
- সাইন-ইন করা না থাকলে জিমেইল একাউন্টে সাইন-ইন করুন
- Add or manage your channel(s) লিংক সিলেক্ট করুন
- Create a channel লিংক সিলেক্ট করুন
- যে নামে চ্যানেল খুলতে চান, সেই নাম লিখে Create চাপুন
উপরোক্ত পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার নতুন ইউটিউব চ্যানেল তৈরী হয়ে যাবে।
কম্পিউটার দিয়ে যেভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন-
জিমেইল একাউন্টের দিয়ে যদি ইতিমধ্যে ইউটিউবে লগইন করার থাকে তবে ধরে নিন আপনার ইউটিউব চ্যানেল মোটামুটি ভাবে ক্রিয়েট করা হয়ে গেছে। এবার কম্পিউটারে বেশকিছু কাস্টমাইজেশন করে আপনার ইউটিউব চ্যানেল টি কমপ্লিট সেটাপ করে নিন।
- ব্রাউজার থেকে YouTube.com এ প্রবেশ করুন
- জিমেইল একাউন্টে সাইন-ইন করা না থাকলে সাইন-ইন করুন
- টপ রাইট কর্নারে থাকা প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করুন
- My Channel এ ক্লিক করুন
- এরপর আপনার চ্যানেলের নাম লিখে Create এ ক্লিক করুন
- উপরোক্ত পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল খুলে যাবে।
ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার উপায়-
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি ইউটিউব চ্যানেল নিয়ম সম্পর্কে পুরোপুরি ভাবে জেনেছেন আশা করি। এবার আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি টিপস শেয়ার করব যেটি অনেক বেশি দরকার। সেটি হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়ম। আপনার একটি চ্যানেল থাকলেই হবে না সেটি সম্পূর্ণরূপে ভেরিফাই করে নিতে হবে তবেই আপনি ইউটিউব এর বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। আর যদি ভেরিফাই না করেন তবে আপনি বেশ কিছু ফিচার আনলক করতে পারবেন না যেগুলো লক হয়ে থাকে। আমার সাথে নিচের দেয়া স্টেপ গুলো ফলো করুন এবং আপনার চ্যানেল টি ভেরিফাই করে নিন।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর ফোন নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই না করার পর্যন্ত কিছু ফিচার লক করা থাকে। যেমনঃ
- ১৫মিনিটের চেয়ে বড় ভিডিও আপলোড
- কাস্টম থাম্বনেইল
- লাইভস্ট্রিমিং
- কনটেন্ট আইডি ক্লেইম আপিল
ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করতে একটি একটিভ মোবাইল নাম্বারের প্রয়োজন হবে। ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়মঃ
- ব্রাউজার থেকে studio.youtube.com এ প্রবেশ করুন
- ইউটিউব চ্যানেলে লগিন করা না থাকলে জিমেইল আইডি দিয়ে লগিন করুন
- বামদিকের মেন্যু থেকে Settings এ ক্লিক করুন
- Channel ট্যাব সিলেক্ট করুন
- Verify Phone Number এ ক্লিক করুন
- এরপর Text me the verification code সিলেক্ট করুন
- Select your country থেকে দেশ সিলেক্ট করুন
- এরপর নিচের ফোন নাম্বার বক্সে ফোন নাম্বার দিয়ে Get Code এ ক্লিক করুন
- এরপর আপনার ফোনে ৬ডিজিটের একটি কোড আসবে, সেটি প্রদান করে Submit চাপুন
উপরোক্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই হয়ে যাবে ও আপনি ভেরিফাইড চ্যানেল এর ফিচারগুলো উপভোগ করতে পারবেন।
ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার সহজ উপায়-
ফাইনালি! আপনার একটি চ্যানেল ক্রিয়েট করা হলো। এবং সেটি ভেরিফাই করলেন। এবার আসল টার্গেট ভিডিও আপলোড করা। কিভাবে সুন্দরভাবে ভিডিওগুলো আপলোড করবেন এবং আপনার কনটেন্ট যেন সর্বোচ্চ রিচ হয় সেই চিন্তা মাথায় রেখেই ভিডিওগুলো আপলোড করতে হবে। এবং আপনি যদি ভিডিও আপলোড করার প্রোপার নিয়ম গুলো ফলো করে ভিডিও আপলোড করেন তাহলে আপনার ভিডিও সর্বোচ্চ ভিউজ এবং রিচ হবার সম্ভাবনা থাকে।
চলুন দেখে নেয়া যাক ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার উপায় –
- ইউটিউব অ্যাপে প্রবেশ করুন
- বোটম মেন্যু থেকে প্লাস চিন্হিত আইকন চাপুন
- Upload A Video সিলেক্ট করুন
- যেই ভিডিও আপলোড করতে চান, সেটি সিলেক্ট করুন
- এরপর ভিডিও এর টাইটেল, ডেসক্রিপশন ইত্যাদি তথ্য প্রদান করুন
- এরপর Upload চাপুন
- কিছু সময়ের মধ্যেই আপনার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড হয়ে যাবে।
কম্পিউটার থেকে ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার প্রক্রিয়াটিও অনেকটা একই ধরনের। কম্পিউটার থেকে ইউটিউব ভিডিও আপলোড করতেঃ
- youtube.com এ প্রবেশ করুন
- আপনার ইউটিউব চ্যানেলে লফিন করা না থাকলে জিমেইল আইডি দিয়ে সাইন-ইন করুন
- এরপর টপ বারে থাকা ভিডিও আইকনে ক্লিক করুন
- Upload Video তে ক্লিক করুন
- এরপর select files to upload অপশন ব্যবহার করে যে ভিডিও আপলোড করতে চান, সেটি সিলেক্ট করুন
- আপনার ভিডিও সম্পর্কিত তথ্য, যেমনঃ টাইটেল, ক্যাটাগরি, ট্যাগ, ইত্যাদি লিখে Next চাপুন
- এরপর ভিডিও তে কোনো এন্ড কার্ড বা ওভারলে দিতে চাইলে তা সিলেক্ট করে Next চাপুন
- এরপর ভিডিও এর প্রাইভেসি সেটিংস সিলেক্ট করে Next চাপুন
- এরপর আপনার আপলোডকৃত ভিডিও এর কপিরাইট সংক্রান্ত কোনো ইস্যু থাকলে তা দেখানো হবে
বর্ণিত সকল ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হলে আপনার ভিডিও ইউটিউবে আপলোড হবে ও আপনাকে একটি ভিডিও শেয়ার এর লিংক দেওয়া হবে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন, ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম সম্পর্কে এবং জেনেছেন ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার উপায় সবশেষে সবচেয়ে জনপ্রিয় টুল ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আমি মনে করি আপনার বেশ কাজে লাগবে এই টিউটোরিয়াল। এরপরেও কোন প্রশ্ন, মন্তব্য থাকলে এখনি কমেন্ট করে ফেলুন। আমরা আপনার মন্তব্য খুব গুরুত্বের সাথে দেখে থাকি।